বরগুনায় আলোচিত রিফাত হ’ত্যা মা’মলায় মৃ’ত্যুদ’ণ্ড থেকে খালাস চেয়ে হাইকো’র্টে আপিল করেছেন তার স্ত্রী আয়েশা
সিদ্দিকা মিন্নি। মঙ্গলবার আ’ইনজীবীর মাধ্যমে হাইকো’র্টে আপিল করেছেন তিনি। হাইকো’র্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল দা’য়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আ’ইনজীবী জেড আই খান পান্না।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, যত শিগগির সম্ভব এ মা’মলার শুনানি হবে, আমরা শুনানি করার চে’ষ্টা করব। আমরা আশাবাদী আ’ইনের আলোকে ন্যা’য়বি’চার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মিন্নি বেকসুর খালাস পাবেন। ‘মিন্নি খালাস পেতে পারেন’ এমন যু’ক্তি দেখিয়েছেন তার আ’ইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ই’সলাম।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সে (মিন্নি) তার স্বামী রিফাতকে দু’র্বৃত্তদের হা’মলা থেকে বারবার প্রা’ণপ’ণে বাঁ’চানোর
চে’ষ্টা করেছেন। কিন্তু আ’দালত রা’য়ে- মিন্নি রিফাতকে বাঁ’চানোর চে’ষ্টা করেনি বলা হয়েছে। অথচ এসব স্প’ষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আ’দালত আবেগপ্রবণ হয়ে মিন্নিকে মৃ’ত্যুদ’ণ্ড দিয়ে রা’য় ঘোষণা করেছেন।
তাই এ রা’য় বা’তিলযোগ্য। হাইকো’র্টে করা মিন্নির আবেদনে বি’চারিক আ’দালতের রায়টি ‘অ’নুমান নির্ভর ও বা’তিলযোগ্য’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি মা’মলার বি’চার ও সা’জাপ্রদানের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলাসহ ২১টি যুক্তি দিয়ে মিন্নির খা’লাস চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
আ’ইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ই’সলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই মা’মলায় আজ আপিল আবেদন করেছি। আবেদনটি মোট ৪৫১ পৃষ্ঠার। আবেদনে বি’চারিক আ’দালতের রা’য়ের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধ’রেছি। এছাড়াও মা’মলা খালাসের পক্ষে সর্বমোট ২১টি যু’ক্তি উপস্থাপন করেছি।
এর আগে মিন্নির স্বাক্ষর করা ওকালতনামা ও মা’ম;লার রা’য়ের সিলমোহরকৃত কপি নিয়ে গত ৪ অক্টোবর তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর রায়ের কপি নিয়ে হাইকো’র্টে আ’ইনজীবী জেডআই খান পান্নার কক্ষে আসেন।
মিন্নির খালাস চেয়ে করা আপিলের যুক্তিগুলো হলো- ১। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার দা’য়রা আ’দালতে যে রা’য় ঘোষণা করা হয়েছে তা আ’ইন, ঘ’টনা এবং পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় একটি খা’রাপ নজির তৈরি করেছে।
২। প্রাথমিকভাবে আপিলকারী (মিন্নি) এই মা’মলায় সাক্ষী ছিল। পরে তাকে মা’মলার আ’সামি করা হয়েছে। তাকে ৫ দিন পু’লিশ রি’মান্ডে রাখা হয়েছিল। ম্যা’জিস্ট্রেট আ’দালত রি’মান্ডের মধ্যবর্তী সময়ে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ আ’ইনবহির্ভুতভাবে তার স্বী’কারোক্তিমূলক জ’বানব’ন্দি রেকর্ড করে। যার কারণে ওই রা’য়টি বা’তিলযোগ্য।
৩। মা’মলার চা’র্জশিটে ৭৫ জন সা’ক্ষী রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭, ১৩, ১৪ এবং ১৭ নম্বর সা’ক্ষী নিজেদের চা’ক্ষুষ সা’ক্ষী দা’বি করা সত্ত্বেও তাদের তথ্য-প্র’মাণ ছিল পক্ষপাতদু’ষ্ট। তাই ওই রা’য়টি বা’তিলযোগ্য। ৪। মিন্নি এ মা’মলার গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য সা’ক্ষী ছিলেন। কিন্তু মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা তাকে অ’পরাধী হিসেবে সা’জা প্রদান করে রা’য় ঘোষণা করায় তা বা’তিলযোগ্য।
৫। মা’মলার ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা অ’স্বচ্ছতার সঙ্গে এ মা’মলার ত’দন্ত করেন এবং কোনোরকম আ’ইনি ভিত্তি ছাড়া
মা’মলার চা’র্জশিট দা’খিল করেন, যা মোটেই নি’র্ভরযোগ্য নয়। ৬। মিন্নির বি’রুদ্ধে আ’নীত অ’ভিযোগ আমলে না নিয়েই বরগুনার দা’য়রা জজ আ’দালত তার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ গঠন করেন। এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধা’রা সঠিকভাবে অ’নুসরণ করা হয়নি। যা তাকে চরমভাবে ক্ষ’তিগ্র’স্ত করেছে।
৭। আ’ইনের সঠিক অনুসরণের অ’ভাবে এ মামলায় মিন্নি নিজেকে র’ক্ষায় উপযুক্ত সুযোগ পায়নি। ৮। মা’মলা দা’য়েরের সময় বা’দী (রিফাতের বাবা) জানান, ঘ’টনাস্থল থেকে মিন্নি রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে
রিকশাযোগে এনে ভর্তি করেন এবং মিন্নিকে একমাত্র সা’ক্ষী করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মা’মলার ত’দন্ত শে’ষে মিন্নিকে আ’সামি করে দ’ণ্ড দেয়া হয়, এতে করে মিন্নি পরিস্থিতির শি’কার হয়েছেন।
৯। আ’দালত (বরগুনার) সন্দেহপূর্ণ, মৌখিক সাক্ষ্য এবং ধারণানির্ভর অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় এ রায় দিয়েছেন, যা বা’তিলযোগ্য। ১০। ওই ঘ’টনায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট দেখা গেছে যে, সে বারবার
তার স্বামী রিফাতকে আ’ক্রমণকা’রীদের হাত থেকে বাঁ’চানোর চে’ষ্টা করেছেন। কিন্তু আ’দালত তার রায়ে মিন্নি রিফাতকে বাঁ’চানোর চে’ষ্টা করেনি বলে উল্লেখ করেছেন। অ’থচ এসব স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আ’দালত আবেগপ্রবণ হয়ে মিন্নিকে সা’জাপ্রদানের রা’য় ঘোষণা করেছেন। তাই এ রা’য় বা’তিলযোগ্য।
১১। মিন্নিকে সা’জাপ্রদানের ঘ’টনা অ’নুমান ও ধারণানির্ভর। এ মা’মলায় সা’ক্ষীদের জে’রাও বিবেচনা করা হয়নি। ফলে মিন্নিকে অ’পরাধী সাব্যস্ত করে সা’জা সংক্রান্ত আ’দালতের রা’য়টি ভু’ল সিদ্ধান্ত। ১২। মিন্নির বি’রুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আ’ইনজীবীরা স’ন্দেহাতীতভাবে অ’ভিযোগ প্র’মাণ করতে পারেননি।
১৩। যেকোনো দৃ’ষ্টিকোণ থেকে বি’চারিক আ’দালতের পক্ষ থেকে মিন্নিকে সা’জাপ্রদানের বিষয়টি নি’র্ভরযোগ্য না হওয়ায় এ রা’য় বা’তিলযোগ্য। ১৪। আপিলকারীকে প্র’হসনমূলক ও অ’যৌক্তিকভাবে সা’জা প্রদান করা হয়েছে।
১৫। রাষ্ট্রপক্ষের সা’ক্ষীরা রাষ্ট্রপক্ষের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই মা’মলায় অ’তিরঞ্জিত করেছেন। ১৬। আপিলকারীকে দো’ষী সাব্যস্ত করা ব্যতীত বি’চারক এই মা’মলায় অন্য আর কিছুই বিবেচনা করেননি।
১৭। দ’ণ্ডবিধি আ’ইনের ৩০২ ধা’রা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় আপিলকারী এ মা’মলায় খালাস পাবেন। ১৮। সময়ে সময়ে এ মা’মলার যু’ক্ত হওয়া সাক্ষীদের ওপর নির্ভর করে সা’জা দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেসব সা’ক্ষীরা বি’শ্বাসযোগ্য ছিল না। ১৯। পু’লিশ বা ম্যা’জিস্ট্রেটের কাছে সা’ক্ষীরা বিভিন্ন বক্তব্য দেয়ায় সেসব সা’ক্ষীরা মোটেও নি’র্ভরযোগ্য ছিল না।
২০। অ’গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অ’নুসরণ করে এ মা’মলার বি’চারপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে। ২১। যেকোনো দৃ’ষ্টিকোণ থেকে এ মা’মলার ঘ’টনা, পারিপার্শ্বিকতা, তথ্য-প্র’মাণের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) স’ন্দেহাতীতভাবে মা’মলার অ’ভিযোগ প্র’মাণে ব্য’র্থ হয়েছে। তাই এ মা’মলায় মিন্নি খা’লাস পাওয়ার যোগ্য।
এর আগে আ’লোচিত রিফাত হ’ত্যা মা’মলায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মিন্নিসহ ৬ আ’সামির মৃ’ত্যুদ’ণ্ড ও চারজনকে খা’লাস দিয়ে রা’য় ঘোষণা করেন আ’দালত। বরগুনার জে’লা ও দায়রা জজ আ’দালতের বি’চারক মো. আছাদুজ্জামান এ রা’য় দেন। এরপর মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) খা’লাস চেয়ে মিন্নির হাইকো’র্টে আপিল আ’বেদন করেন।